সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৬ অপরাহ্ন

হজ থেকে কী নিয়ে এলেন

হজ থেকে কী নিয়ে এলেন

হে আল্লাহর মেহমানগণ! আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর ডাকে আল্লাহর ঘর তথা বাইতুল্লাহ বা পবিত্র উপত্যকা মক্কা-মদিনায় বেশ কিছুদিন বেড়িয়ে এলেন। আল্লাহর মেহমানদারির অনেক কিছুই সেখানে উপভোগ করেছেন। দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণের অনেক নমুনা দেখে এলেন। আরাফাতের ময়দানে মানবতার নবী সা: ও তাঁর শেষ বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার এ কথাগুলো পরবর্তী বা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের কাছে পৌঁছে দিও। হতে পারে তারা তোমাদের চেয়ে অধিকতর দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।’

হে মেহমানগণ! এখন বলুন, আপনি আপনার পরিবার, আপনার সমাজ, আপনার দেশ ও জাতির জন্য কী পয়গাম নিয়ে এলেন? যদি নিয়ে এসে থাকেন, তাহলে কোনো প্রকার দ্বিধা-সঙ্কোচ নয়, সব প্রকার জড়তা ছাড়াই আপনার পরিবার, সমাজ ও জাতির সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং হজরত ইবরাহিম আ:-এর মতো সগর্বে ঘোষণা দিন, হে আমার পরিবার! হে আমার জাতি! তোমরা আজ যা করছ আমি সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র সেই প্রভুর দিকে ফিরে যাচ্ছি, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, যার সাথে কোনো শরিক নেই, আসমান-জমিনে একমাত্র তাঁর রাজত্বই চলবে। আমি আরো ঘোষণা করছি, সৃষ্টি যার হুকুম চলবে তাঁর।

কারণ তালবিয়ার মাধ্যমে আমি আল্লাহর কাছে সেই কথাই বলে এসেছি। আমি বলে এসেছি ‘লা শারিকা লাকা লাব্বায়িক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক’। হে আমার জাতি! আল্লাহর মেহমানদারির সময়টাতে একবার নয়, দু’বার নয়, শতবার, হাজারবার এ কথা বলে এসেছি। বলে এসেছি রাজত্ব ও হুকুমাত একমাত্র তোমারই চলবে। আর প্রকৃত সত্য তো এটাই যে, তাঁর সৃষ্ট জমিনে অন্যের হুকুমাত তো কখনো চলতে পারে না। অর্থাৎ সৃষ্টি যার, আইনও চলবে তাঁর।

সুতরাং হে আমার পরিবার! হে আমার সমাজ! হে আমার জাতি! আমি নিমকহারামি করতে পারি না। যদি এমনটি করি তবে আমি একই সাথে ওয়াদাভঙ্গকারী, মিথ্যাবাদী ও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো। বাইতুল্লাহর চারদিকে আমার তাওয়াফের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আমার সব কিছুই তথা আমার জীবনাচরণ এই ঘরকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হবে। আজ থেকে আমার জীবনে পরিবর্তনের একটা সূচনা সৃষ্টি হবে। আমার আরো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল, আমি দেশে গিয়ে আমার রাজনীতি, আমার সমাজনীতি ও আমার অর্থনীতি তথা আমার সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ ঘরের দিকে ফিরিয়ে আনার আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

এ জন্য যদি আমার জান, আমার মাল ও আমার পরিবার হুমকির সম্মুখীন হয়, তাতে কোনো আপস ও পরোয়া কোনোটিই করব না। যেমনটি করেননি উহুদের ময়দানে শায়িত সাইয়েদুশ শুহাদা বীর আমির হামজাসহ ৭০ জন সাহাবি রা:, যেমন সামান্যতম পিছপা হননি জান্নাতুল বাকিতে শায়িত লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরাম। যেমনটি জীবন-মরণ সঙ্কটেও সামান্যতম হতোদ্যম হননি, গারে সওরে আশ্রয় নেয়া সারোয়ারে আলম ও তাঁর সাথী। মক্কার রাজা-বাদশা, ধনদৌলত ও সুন্দরী নারীর প্রলোভন যাঁর লোভকে উসকে দিতে পারেন, মক্কার কাফের সরদাররা। নিজ জাতির চরম বিরোধিতার মুখে মদিনায় হিজরত করে হলেও আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করে পৃথিবীবাসীর সামনে তার সুফল তিনি দেখিয়ে গেছেন।

হে আমার জাতি! আমি আমার বাস্তবচক্ষে দেখে এসেছি আল্লাহর কয়েকটি আইনের সুফল। এক. চুরির আইন : সেটি সৌদিতে আজো বলবৎ থাকায় কোটি কোটি টাকার মূল্যবান গাড়ি রাস্তায়, মাঠে ময়দানে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। উল্লেখ্য, সৌদিতে কারো বাড়িতে ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক কোনো গ্যারেজ নেই, অথচ কোনো গাড়ির ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশও চুরি হয় না। দুই. কিসাস বা হত্যার আইন : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে খুনাখুনিতে নিহতের হার সৌদির তুলনায় অনেক কম। কারণ সৌদিতে আজো কুরআনের কিসাস আইনটি বলবৎ রয়েছে। তিন. জিনা, ব্যভিচার, নারী হাইজ্যাকের ঘটনাও কম। কারণ সেখানে রজম আইনটি বলবৎ রয়েছে। চার. আল কুরআন বলছে ‘নিশ্চয় নামাজ মানুষকে ফাহেশা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ নামাজের আজান হওয়ার সাথে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সবাই নামাজের দিকে চলে যায়। অর্থাৎ সেখানে এখনো নামাজ কায়েম রয়েছে। ফলে রাস্তাঘাটে, বাজার ও মার্কেটে আমাদের দেশের মতো বেলেল্লাপনা নেই, দোকান বা কোনো প্রতিষ্ঠানে আমাদের দেশের মতো কোনো গানবাজনা বাজছে না। দু-একজন নারী রাস্তাঘাটে পাওয়া গেলেও অত্যন্ত শালীনতার সাথে পথ চলছে, কেউ তাদের উত্ত্যক্ত করছে না।

হে আমার জাতি! আমি রাতের ইথারে কান পেতে শুনেছি, এই বুঝি মহাকালের মহান রাষ্ট্রপতি হজরত ওমর ফারুক রা: পিঠে খাদ্য নিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন। অর্ধেকটা পৃথিবীর দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী বাদশা ‘ফুরাতের তীরে একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যাওয়ার ভয়ে সদায় কম্পমান থাকেন। মনের চক্ষু দিয়ে দেখতে পেলাম ওই যে গাছটির নিচে মাথার নিচে ইট দিয়ে নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমাচ্ছেন ইসলামী দুনিয়ার সেই শাসক। যেই শাসক মানুষের প্রতি জুলুম করেন না, মানুষের হক মেরে নিজের পেট পুরেন না, মানুষের সব প্রকার অধিকারকে খর্ব করে স্বৈরাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন না।

হে আমার জাতি! আল কুরআন এমনই একটি সমাজ কায়েম করতে চায়। আমি পবিত্র হজ থেকে সেই শিক্ষাই নিয়ে এসেছি। এখানে অন্যদের শাসন চলতে দেয়া মানে নিজেকে তাগুতের হাতে ছেড়ে দেয়া, তাগুতের সাথে আপস করা অথবা পুরোপুরি তাগুতের অনুসরণ করা, পক্ষান্তরে আল্লাহকে ছেড়ে দেয়া, আল্লাহর সাথে অন্যদের শরিক করা। যদি আল্লাহ ছাড়া অন্যদের শাসনব্যবস্থা মেনে নেই, তবে আমার নামাজ, আমার রোজা, আমার জাকাত ও হজ কী কাজে আসবে? হে আমার জাতি! আমি আবারো ঘোষণা করছি, আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হুকুম, অন্য কারো পথ ও মত মানি না। আজ থেকে আমি সব পরিহার করে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবো। আপনারাও আমার সাথে শরিক হন। হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমি তোমার মেহমানদারিতে যে পয়গাম নিয়ে এসেছিলাম তা আমি আমার জাতির কাছে পৌঁছে দিলাম। যাতে আমার জাতি আমাকে তোমার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারে। আমাকে তুমি কবুল করো।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877